সঠিক ক্যারিয়ার বাছাইয়ে করণীয়
ক্যারিয়ার জীবনের সূচনাতেই জটিলতা ও সংকট থেকে বাঁচতে হলে তরুণদের এমন একটি ক্যারিয়ার বেছে নেয়া উচিৎ যেখানে তাদের নিজেদের আগ্রহ ও যোগ্যতার সমন্বয় সাধন সম্ভব। এজন্য ক্যারিয়ারের লক্ষ্য নির্ধারণে কলেজ জীবনই হল সর্বোত্তম সময়।
তবে এক ছাত্র ঠাট্টা করে বলছিল- তাদের বাবাদের প্রজন্মের প্রধান সংকট ছিল মধ্য জীবনের সংকট। অথচ তাদের প্রজন্মে এসে তারা এখন প্রথম জীবনেই সংকটে পড়ছে। কারণ স্বপ্নের চাকরি মিলছে না বোর্ড পরীক্ষায় ১০০ শতাংশের কাছাকাছি নম্বর পাওয়ার পরও স্বপ্নের চাকরিটি তার কাছে ধরা দিচ্ছে না।
যেখানে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের সামান্যতম সাফল্যও খুশির সাথে উদযাপন করেন সেখানে কেন আজ আমাদের ৬০ শতাংশ পাস করা তরুণ তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন?
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কী চাকরি পাব?
কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে সব কাজের সুযোগ আছেঃ
১। উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
২। মিল কারখানাসহ দেশে বিদেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাকরির সুযোগ রয়েছে।
৩।পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, টি এন্ড টি , টেলিভিশন, বেতার, আনবিক শক্তি কমিশন, আবহাওয়া অধিদপ্তর,ভোকেশনাল স্কুল-কলেজ, কারিগরি বিষয়ে শিক্ষক, সিটি কর্পোরেশনসমূহ, পৌরসভা সমূহ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, বিমানবাংলাদেশ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, ব্যাংক , পল্লী বিদ্যুৎ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসমূহ , টিটিসি ছাড়াও অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানে রয়েছে চাকরির সুযোগ।
৪। সরকারী চাকরির পাশাপাশি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
৫। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও কাজের প্রচুর ক্ষেত্র রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি নিজেদের কারিগরি দক্ষতা যত বাড়াতে পারবেন, এ খাতে তত ভালো করা সম্ভব। নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে কাজের অভাব হবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে বর্তমান বেতন স্কেলে দশম গ্রেডে বেতন পাওয়া যাবে। বেসরকারিতে প্রতিষ্ঠানভেদে বেতন ভিন্ন হয়।
ক্যাম্পাস থেকে ক্যারিয়ারের সন্ধিক্ষণ
হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, তৃতীয় বিশ্বের যে কোনো দেশের আন্তর্জাতিক মানসম্মত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করারাও ক্যারিয়ার নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। যার ফলে ক্যারিয়ারের সূচনাতেই তারা এক ধরনের ‘অপ্রস্তুত’ অবস্থায় পড়ে যায়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ও শিক্ষার্থীরা ছয়টি সাধারণ ক্ষেত্র খুঁজে বের করেছে যেগুলো নিয়ে পড়াশোনা শেষ ও প্রথম চাকরিতে ঢোকার আগেই কাজ করা দরকার। শিক্ষার্থীরা যে বিশেষ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে বা তাদের যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান আছে তার বাইরেই ওই ছয়টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়।
১। জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ অর্থাৎ ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য চিহ্নিতকরণ
২। ভালো ভাষাগত যোগাযোগ দক্ষতা (লেখা ও বলা উভয় ক্ষেত্রে)
৩। স্মার্টনেসের সঙ্গে কাজ করার দক্ষতা (বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধান, সময়ানুবর্তিতা)
৪। কর্ম বা ব্যবসার মূল নীতিমালা সম্পর্কে সচেতনতা
৫। প্রথম দেখাতেই কাউকে ভাবভঙ্গিতে প্রভাবিত করার সক্ষমতা (উপস্থাপনের জন্য যোগ্য হওয়া)
৬। চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সক্ষমতা (সিভি, ইন্টারভিউ ও পেশাগত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার দক্ষতা)।
চ্যালেঞ্জসমূহ
ক্যারিয়ার নিয়ে জটিলতার শুরু হয় মূলত কোনো শিক্ষার্থীকে যখন তার অপছন্দের বা অনাগ্রহের পথে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। এই সংকট আরো চরম আকার ধারণ করে শিক্ষার পদ্ধতির কারণে; যার বেশিরভাগই তাত্ত্বিক এবং পূণরাবৃত্তিমূলক।
এছাড়া প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতনতার ঘাটতির কারণে তারা সমস্যায় পড়ে থাকে। এর প্রধান কারণ বিদ্যালয়ের পাশাপাশি তারা ঘরে এসে বাবা-মার কাছ থেকেও ক্যারিয়ার সম্পর্কে কোনো দিক নির্দেশনা পায় না। এর কারণ সম্ভবত তাদের বাবা-মায়েরাও এমন কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি।
সমাধান
প্রথমেই শিক্ষার্থীদেরকে তাদের স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভাবতে উৎসাহিত করতে হবে। এবং তাদেরকে এমন একটি ক্যারিয়ার বাছাইয়ে প্রণোদনা দিতে হবে যেখানে তারা তাদের আগ্রহ ও যোগ্যতার সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করার পর চাকরিতে প্রবেশের মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাদের চাকরি ছেড়ে দেয়। এর কারণ, তারা চাকরিতে প্রবেশের আগে নিজেদের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে যথেষ্ট গবেষণা করে প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করেন না। এবং তাদেরকে যে পদ প্রস্তাব করা হয় সে পদের জন্য তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি ও দক্ষতা আছে কিনা তাও বিচার-বিবেচনা করে দেখেন না।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদেরকে কলেজে থাকা অবস্থায়ই সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ বা অন্তর্বর্তীকালীন কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো, পরামর্শ গ্রহণ ও চাকরির বাস্তব দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ওই গবেষণায় আরো দেখা গেছে, শীর্ষস্থানীয় আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা-জীবনেই কর্মক্ষেত্রে কোনো ইন্টার্নশীপের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে না। এর ফলে পাশ করে বের হওয়ার পর তারা যখন কোনো চাকরিতে ঢোকে তা-ই হয় তাদের জন্য জীবনের প্রথম চাকরি।
তৃতীয়ত, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অভিজ্ঞাতাহীন মেধাবীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।